-নাফিউ জামান (বার্তা সম্পাদক)
“ফসলের মাঠ বলে দেবে কুমিল্লার কোথায় শুরু আর কোথায় শেষ”। আয়তন বলে দিতে হবে না। কথাটি বলেছিলেন কুমিল্লা প্রথিতযশা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যক্ষ আবুল কালাম মজুমদার। পেশায় ছিলেন একজন শিক্ষক। অবহেলিত জনপদে শিক্ষার আলো ছড়াতে গড়ে তুলেছিলেন অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আজ এই মানুষটির ২৬ তম মৃত্যু বার্ষিকী ।
অধ্যক্ষ আবুল কালাম মজুমদার পিতা মিয়াজান মজুমদার ও মাতা আতরের নেসা মজুমদারের কোল আলোকিত করে ১৯৪৫ সালের ২৫ আগষ্ট কুমিল্লা জেলার লালমাই উপজেলার মেহেরকুল দৌলতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আদর করে ছোটবেলায় সবাই তাকে ‘আবু’ বলে ডাকতো।
শিক্ষাজীবন শুরু করেন তার পিতা মিয়াজান মজুমদার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দৌলতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তারপর বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বোর্ড থেকে প্রথমবিভাগে SSC পাশ করেন। তারপর ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। ১৯৬৪ সালে তিনি মেধা তালিকায় ১৪ তম স্থান অধিকার করে HSC পাশ করে। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতির উপর অনার্স মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।পড়াশুনা শেষ করে তিনি নজরুল একাডেমিতে (পিপুলিয়া) প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অধ্যক্ষ আবুল কালাম মজুমদার মাটি ও মানুষের আর্ত-সামাজিক উন্নয়নে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এই মানুষটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৯৭৩ সালে এবং পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে সংসদে তার বক্তব্য তাকে নতুন ভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়।এসময় তিনি সংসদের সেরা বক্তা হিসেবেও নির্বাচিত হন। নব্বইয়ের স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি জাতীয় নেতায় পরিনত হন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি কুমিল্লা জেলা ১৫দলের আহ্বায়ক ছিলেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কার্যকরি পরিষদের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সাধারন সম্পাদক ছিলেন এবং লন্ডনে এক সেমিনারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
অবহেলিত জনপদে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে তার ভূমিকা ছিলো অসামান্য। এসময় তিনি লালমাই সরকারি কলেজ, বাগমারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,দৌলতপুর উচ্চ বিদ্যালয়,সরদার হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয় সহ কুমিল্লা জেলায় বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামাল এই নেতার নামে বাগমারায় ‘অধ্যক্ষ আবুল কালাম মজুমদার মহিলা কলেজ” নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৯৪ সালের ৩১ অক্টোবর তিনি দূরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৪৯ বছর বয়সে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রতি বছরের ন্যায় এইবারেও অধ্যক্ষ আবুল কালাম মজুমদার হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রাঙ্গনে সসমাধীস্থলে দোয়া-মোনাজাতের আয়োজন করা হচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ