প্রদীপ মজুমদার :
কুমিল্লা লালমাই উপজেলাধীন বাগমারা উত্তর ইউনিয়নের জয়কামতা গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নতুন ঘর নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করায় ছয়টি ভূমিহীন পরিবারের মাঝে দেখা দিয়েছে উচ্ছেদ আতঙ্ক। এ নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদের শেষ সম্বলটুকু বাঁচাতে প্রশাসনের দ্বারে কাকুতি-মিনতি করেও কোনো ভরসা পায়নি ভূমিহীন এই পরিবারগুলো। পরিশেষে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও হারানোর শঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, জয়কামতা গ্রামের ভূমিহীন প্রতিবন্ধী মনোয়ারা বেগম (৮০) দুই ছেলে ও নাতি-নাতনী নিয়ে বহু বছর ধরে সরকারি এই খাস জমিতে বসবাস করে আসছেন। হঠাৎ গতকাল উপজেলা প্রশাসন কোনো নোটিশ ছাড়াই তাদের ঘর উঠিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিলে উচ্ছেদ আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। দেশে একজনও গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা অনুযায়ী ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করা হবে সুতরাং এখানে বসবাসকারীরা যেহেতু গৃহহীন তাদের জন্যই সরকারের এই জমিটা বন্দোবস্ত করে দেয়া হোক।
ভূমিহীন মোমেনা বেগম বলেন, আমি অনেক বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। আমার স্বামী নাই। অন্যের বাসায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। এখন যদি আমাকে এখান থেকে উচ্ছেদ করে দেওয়া হয় তাহলে আমি কোথায় যাবো? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ আমাকে এখানেই থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।
ভূমিহীন বটু মিয়া বলেন, আমি এখন যেখানে বসবাস করছি এখানে আগে আমার বাবা থাকতো, এখন আমি থাকি। আমার একটুও জমি নাই, একবার সরকারের কাছে আবেদন করে ৫ শতক জমি পেয়েছিলাম। পরবর্তীতে এক পক্ষ মামলা করে সে জমিও নিয়ে গেছে। গতকাল ইউএনও স্যার এসে বললো আমার বসবাসকৃত জমিটা খালি করে দেয়ার জন্য। আমি বললাম স্যার আমিও তো ভুমিহীন। জমিটা ছেড়ে দিলে আমি থাকবো কোথায়?
স্থানীয় সমাজ প্রতিনিধি মোখলেছুর রহমান (দাদা ভাই) বলেন, যুগ যুগ ধরে তারা বংশপরম্পরায় এখানে ধরে বসবাস করে আসছে। গতকাল লালমাই উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফোরকান এলাহি অনুপম সাহেব উপজেলা কর্মকর্তাদের নিয়ে জয়কামতা গ্রামে এসেছেন। তখন আমি তাকে বললাম যে স্যার আমি গত পরশু দিন তহশিল অফিসে গিয়েছি দাখিলার জন্য তখন অফিসার বললেন কবুলিয়ত নিয়ে আসলে তিনি দাখিলা কেটে দিবেন, এ কথাটা বলা মাত্রই ইউএনও স্যার আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে দুইজন পুলিশকে বললেন এই ওনাকে ধরেন, দুই হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে গাড়িতে নিয়ে বসান। পরে আমাকে গাড়িতে বসিয়ে রাখলেন। কি অপরাধ ছিল আমার, শুধুমাত্র একটি কথা বলার কারণে আমাকে এতো অসম্মান করা হয়েছে। আমি কয়েকবার সরিও বললাম।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আবু তাহের বলেন, গতকাল আমি এখানে এসে দেখি উপজেলা প্রশাসন জায়গা মাপতেছে। মূলত যে জায়গাটা মাপ দিয়েছে সেটা ব্যক্তি মালিকানা। আর যে জায়গাটা খাস সেখানে বসতবাড়ি করা। একশো বছর ধরে এখানে লোকজন বসবাস করছে। আর এখানে ইউএনও স্যার আসছেন ভালো কথা কিন্তু তিনি আমাদের সমস্যা ও সুবিধা অসুবিধার কথাটুকু তো শুনবেন? কিন্তু তা না করে তিনি কাউকেই পাত্তা দিচ্ছেন না। যে একটু কথা বলে তাকেই হুমকি ধামকি দিয়ে গাড়িতে তুলে ফেলছেন।
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, শতবছর ধরে এখানে অসহায়, নিরীহ, ভুমিহীন লোক বসবাস করছে। এছাড়াও এখানে একজন প্রতিবন্ধী মহিলাও বসবাস করে। এদেরকে উচ্ছেদ করা হলে তারা কোথায় গিয়ে থাকবে। তাই আমার অনুরোধ থাকবে তারাও যেহেতু ভূমিহীন তাদেরকে এখানেই বসবাস করার সুযোগ দেয়া হোক।
আরো পড়ুনঃ