কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় প্রায় ২শ’ ট্রাক্টর নিত্য মালামাল পরিবহনে রাস্তাঘাট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের দাপটে সড়কে চলাচল দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সড়ক ভেঙে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইটভাটার মাটি বহনের কাজে ব্যবহৃত অবৈধ যান ট্রাক্টরের চাকার আঘাতে বেহাল হয়ে পড়েছে বিভিন্ন সড়ক। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যানবাহনের চালক, যাত্রী ও পথচারীরা।
কৃষির উন্নয়নে এসব ট্রাক্টর আমদানি করা হলেও অনিয়ন্ত্রিতভাবেই মালিকরা এগুলো ব্যবহার করছে ভাটার মাটি, ইট, বালু ইত্যাদি মালামাল পরিবহনের কাজে। এতে করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরী হয়ে উঠেছে।
উপজেলায় সরজমিন ঘুরে ট্রাক্টরের এমন দাপট দেখা গেছে। সাধারণ মানুষের কাছে ট্রাক্টর এখন মহাযন্ত্রণার কারণ।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এক থেকে দুই বছর আগে নতুন করে সড়ক পাকাকরণ ও পুরোনো সড়ক সংস্কার করে। দুই মাস ধরে উপজেলাজুড়ে ব্যাপক ভিত্তিতে ফসলি জমির মাটি কাটা ও পুকুর খনন করে সেই মাটি ইটভাটায় বহন শুরু হয়েছে। অতিরিক্ত ওজনের মাটি নিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪০টি ট্রাক্টর এসব সড়কে চলাচল করছে। এ কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাকা সড়কগুলোর কার্পেটিং উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বেড়েছে জনদুর্ভোগ।
মাটি টানার কাজে ব্যবহৃত এসব ট্রাক্টর এবং তিন চাকার যান সড়ক-মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলাচল করছে এসব অবৈধ যান। এতে করে সরকারের কোটি কোটি টাকায় নির্মিত সড়কগুলো নষ্ট হচ্ছে। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সমন্বয় সভায় কয়েক দফায় বিষয়টি তুলে ধরা হলেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ট্রাক্টরগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে ১২টি ইটভাটা। এসব ভাটায় ইট তৈরির জন্য উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমির মাটি ও পুকুর খনন করে মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে। ট্রাক্টরে বহন করা হচ্ছে সেসব মাটি। অতিরিক্ত ভারবাহী এসব যানবাহনের চাপ গ্রামীণ সড়কগুলো সইতে পারছে না। এ কারণে সড়কগুলোর কার্পেটিং উঠে গিয়ে ছোট–বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গাড়ি চলার সময় ট্রাক্টরের মাটি গিয়ে পড়ছে পাকা সড়কের ওপর। ফলে যানবাহন চললে সড়কে উড়ছে ধুলা।
সরজমিনে আলীশ্বর, শানিচোঁ, বাগমারা সৈয়দপুর, নোয়াগাঁও, মেহারকুল দৌলতপুর, ভূশ্চি, গৈয়ারভাঙ্গা, যুক্তিখোলা, বেলঘর, দোশারীচোঁ,আলোকদিয়া, পেরুল, ভাবকপাড়া,শিকারীপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাকা সড়কজুড়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কে চলাচল করা সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত ভ্যানের কয়েকজন চালক বলেন, মাটি বহনকারী ট্রাক্টর চলার কারণে সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে।
বাগমারার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, ইটভাটার মাটি বহনের ট্রাক্টরে কোটি কোটি টাকার সড়ক নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া মারাত্মক শব্দদূষণ ও ধুলাবালির কারণে সড়কসংলগ্ন বাড়িতেও বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হানিফ সরকার বলেন, আমি নতুন সবে মাত্র যোগদান করলাম, বেপরোয়াভাবে অপ্রাপ্তদের দিয়ে ট্রাক্টর চালিয়ে রাস্তা নষ্ট যাতে না হয় সে বিষয়ে ট্রাক্টর চালকদের সতর্ক করা হবে। নিয়ম না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।