নেক ব্লাস্টের তীব্র ঝুঁকিতে বোরো ধান! ব্যাহত হতে পারে কাঙ্খিত উৎপাদন!

-অনলাইন ডেস্কঃ
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের তীব্র ঝুঁকিতে আমাদের প্রিয় স্বদেশে এই মহামারি ভাইরাসের সংক্রমণ প্রশমনে সাধারণ ছুটি সহ দেশব্যাপী চলাচল সীমিত করা হয়েছে। এই সাধারণ ছুটিতে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে আমাদের কৃষি বা নিরবিচ্ছিন্ন কৃষি উৎপাদন। চাহিদা মাফিক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না সরেজমিন কৃষি পরামর্শ সেবা। দেশের ধান উৎপাদনের সিংহভাগই হয় বোরো মৌসুমে, যা বর্তমানে চলমান। সবকিছু ঠিক থাকলে কয়েকদিন পরেই শুরু হবে বোরো ফসল কর্তন/সংগ্রহ। ঠিক এই মূহুর্তে বোরো ফসলের সবচেয়ে বড় শত্রু নেক ব্লাস্ট। নেক ব্লাস্টের আক্রমনে বোরো ফসল শতভাগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।নেক ব্লাস্ট রোগটি বর্তমানে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক রোগের একটি। ধানের সবচেয়ে বড় মহামারি বলা চলে নেক ব্লাস্ট-কে। কারণ নেক ব্লাস্ট সরাসরি পুষ্পমঞ্জরিকে আক্রান্ত করে। এই রোগের ফলে ধানের শিষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় খুব বেশি। প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগটি শনাক্ত করা যায় না। সাধারণত যখন রোগটি শনাক্ত করা হয় তখন জমির ফসলের অধিক ক্ষতি হয়ে থাকে।

নেক ব্লাস্ট রোগ কি?

এটি এক ধরণের ছত্রাকজনিত মারাত্মক ক্ষতিকর রোগ। Magnaporthe oryzae নামক ছত্রাক দ্বারা এই রোগটি হয়ে থাকে। সাধারণত বোরো ও আমন মৌসুমে এই ব্লাস্ট রোগটি হয়ে থাকে। এই ছত্রাকটি উদ্ভিদগুলির স্থলভাগের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। সাধারণত ধানের ফুল আসার পর থেকে এই রোগ দেখা যায়। চারা অবস্থা থেকে শুরু করে ধান পাকার আগ পর্যন্ত রোগটি দেখা দিতে পারে।

লক্ষণঃএই রোগটি ধানের পাতা ব্লাস্ট, গিট ব্লাস্ট ও নেক ব্লাস্ট নামে পরিচিত।

পাতা ব্লাস্টঃধানের আক্রান্ত পাতায় প্রথমে ছোট ছোট কালচে বাদামী দাগ দেখা যায়। আস্তে আস্তে দাগগুলো বড় হয়ে লম্বাটে হয় এবং দাগের মাঝখানে সাদা ও কিনার বাদামী রঙ ধারণ করে। একাধিক দাগ মিশে গিয়ে এক পর্যায়ে পাতাটি শুকিয়ে মরে যায়।

গিট ব্লাস্টঃধানের গিট আক্রান্ত হলে কালো ও দূর্বল হয়ে যায়। তবে প্রবল বাতাসে আলাদা হয়ে যায় না।

নেক বা শীষ ব্লাস্টঃশিশির বা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সময় ধানের শীষের গোড়ার সংযুক্ত স্থানে পানি জমে। ফলে উক্ত স্থানে ব্লাস্ট রোগের জীবাণু আক্রমণ করে। ফলে আক্রান্ত স্থানে বাদামী বা কালো রঙের দাগ পড়ে। এক পর্যায়ে ধানের শীষের গোড়ায় পচন ধরে। গাছের গোড়া পচে যাওয়ার জন্য গাছের খাবার ঠিকমতো শীষে যেতে পারে না তাই শীষ ভেঙে যায়। ধানের পরিপুস্ট হওয়ার আগে এই রোগ হলে শীষের সব ধান চিটা ধান হয়ে যায়।যদি ধান গাছের মিল্ক স্টেজে রোগটি দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে চিটা ধান পাওয়া যাবে। কিন্তু যদি অনেক পরে আক্রান্ত হয় তবে নিম্নমানের ফসল পাওয়া যাবে।

ব্লাস্ট রোগটি হওয়ার কারণ (অনুকূল পরিবেশ) দিনের বেলায় গরম (২৫°-২৮° সেন্টিগ্রেড), রাতে ঠান্ডা (২০°-২২° সেন্টিগ্রেড)
অধিক আদ্রতা(শতকরা ৮৫ ভাগ বা তার বেশি)
শিশির ভেজা দীর্ঘ সকাল
মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, ঝড়ো আবহাওয়া
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি যা বর্তমান (এপ্রিলের ১ম সাপ্তাহ) বিরাজমান।

রোগের বিস্তারঃবাতাসের মাধ্যমে ব্লাস্ট রোগের জীবাণু এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়ায়। আর যেখানেই অনুকূল পরিবেশ পায় সেখানেই জীবাণু পড়ে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। বীজের মাধ্যমেও রোগটি ছড়ায় তবে তা তুলনামূলকভাবে কম।

দমন ব্যবস্থাঃপ্রাথমিক অবস্থায় এই রোগ দমনের জন্য জমিতে প্রতিরোধী জাতের উদ্ভিদের বীজ বপন করতে হবে। এই ধরণের প্রতিরোধী জাতের বীজ পেতে হলে স্থানীয় কৃষি অফিসের নিকট যোগাযোগ করতে হবে।

সঠিক সময়ে রোপণ করতে হবে।বর্ষাকাল শুরু হওয়ার পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বীজ বপন করতে হবে।

দুই বা ততোধিক বার নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে সারের অত্যধিক ব্যবহার ব্লাস্ট রোগের তীব্রতা বাড়িয়ে তুলতে পারে, তাই সার প্রয়োগে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাঠে অধিক পরিমাণে সেচ দেয়া।
নেক ব্লাস্ট রোগ হোক বা না হোক প্রাথমিক সতর্কতা হিসেবে, ধানের শীষ বের হওয়ার আগেই প্রতি ৫ শতাংশ জমিতে ব্লাস্টিন (৭৫ ডাব্লিউ ডি জি) ৬ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে বিকালে সপ্তাহে ২ বার স্প্রে করতে হবে।
জমিতে সিলিকন সার (ক্যালসিয়াম সিলিকেট) প্র‍য়োগ করতে হবে,এই সার ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধ করে। যেহেতু এই ধরণের সারের দাম বেশি তাই খুব দক্ষতার সাথে সার প্রয়োগ করতে হয়। এছাড়া সিলিকন সারের বিকল্প হিসেবে শুষ্ক খড়কুটো ব্যবহার করা যায়।
এছাড়াও নেক ব্লাস্টের প্রতিষেধক হিসেবে ট্রাইসাইক্লোজল (যেমন-ট্রুপার ৭৫ wp,সামার ৭৫ wp), টেবুকোনাজল+ট্রাইক্লক্সিস্টবিন (যেমন- নাটিভো ৭৫ wp) প্রতি লিটার পানিতে ১-১.৫ গ্রাম মিশিয়ে বিকেল বেলায় আক্রান্ত জমিতে স্প্রে করতে হবে। থোড়/ফুলাবস্থায় জমিতে কখনো সকাল বালাইনাশক কিলবা পরিচর্যা করা যাবে না।
প্রিয় কৃষক ভাইয়েরা করোনার এই আপদ কালিন সময়ে আপনাদের যেকোন কৃষি বিষয়ক জিজ্ঞাসা কিংবা পরামর্শের জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারেন।

মোসলেহ উদ্দিন
উপ সহকারী কৃষি অফিসার
লালমাই, কুমিল্লা।

মোবাইলঃ-01712639001
moslehuddin1999gmail.com

     আরো পড়ুনঃ

পুরাতন খবর:

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১